আমরা ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসনের কাছে অনেকগুলি ব্যাপারে ঋণী। তার মধ্যে অন্যতম, রাষ্ট্রব্যবস্থার তিনটি প্রধান খুঁটির পরস্পর ব্যবধান। ইংরেজের অলিখিত সংবিধানের প্রধান ভিত্তি শাসনযন্ত্রের তিনটি প্রধান অঙ্গের পরস্পর স্বাতন্ত্র্য। নির্বাচিত বিধানসভা, নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী তথা মন্ত্রিমণ্ডলী আর বিচারব্যবস্থা...প্রত্যেকে স্বাধীন, পরস্পরের কাজে বা অধিকারে হস্তক্ষেপ করে না।
কথাটা সর্বাংশে সত্যি নয়। আইনব্যবস্থা তথা আদালত সংবিধানের ব্যাখ্যা করতে অধিকারপ্রাপ্ত। সেই ব্যাখ্যার মারফত তারা পার্লামেন্টের পরিবর্তিত আইনকে বেআইনি ঘোষণা করতে পারে। কর্মচারী বা মন্ত্রীদের কার্যবিশেষও আইনবিরুদ্ধ হলে নিষেধ করতে পারে। এই সাংবিধানিক আদর্শ ভারতবর্ষ মেনে নিয়েছে।
ভারতীয় রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের ভিতরে আইনের আপেক্ষিক প্রাধান্য লক্ষণীয়। সংবিধান ব্যাখ্যা করার চরম অধিকার উচ্চতম আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাতে। এই অধিকার সংবিধান এবং নাগরিকদের আস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষা থেকে আমরা জানতে পারি যে, শতকরা ৭২ জন ভারতীয় আইনব্যবস্থায় আস্থাবান। সে ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীরা শতকরা ৫৬ জনের বিশ্বাসভাজন আর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শতকরা ৪২ জনের। দুর্নীতি আমাদের আদালতগুলিকে স্পর্শ করেছে, তা সত্ত্বেও! তা ছাড়া পর্বতপ্রমাণ মামলা ঝুলে আছে: নিম্ন আদালতে ২ কোটি ৪৮ লক্ষ আর সুপ্রিম কোর্টে সাড়ে ৩৬ লক্ষ।
বজ্রমুষ্টি! অযোধ্যা, ১৯৯২।
সাম্প্রতিক কালে, মানে আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে হিন্দুত্ববাদের ক্ষমতা বাড়ার ফলে রাষ্ট্রজীবনের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক আমাদের ইতিহাসে একটি প্রধান বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান বইটি এই প্রসঙ্গে আমাদের উচ্চতম আদালত, সুপ্রিম কোর্টের অবদান বিষয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ। বইটি ‘ল ইন ইণ্ডিয়া’ সিরিজের অন্তর্গত, কিন্তু এটি মূলত আইনবিষয়ক বই মনে করলে ভুল হবে। আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের রাজনীতিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক এবং অবশ্যই আইনের ইতিহাসের ক্ষেত্রে এর বক্তব্যগুলির গভীর প্রাসঙ্গিকতা আছে।