Thursday, May 2, 2013

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ - এম.আর.মাহবুব


পর্ব: ১
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং বাঙালী জাতিকে স্বাধিকার অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পরই শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত মাস। আমাদের বর্ণমালার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময় আমরা অর্জন করি আমাদের বর্ণমালা ও ভাষার অধিকার। বায়ান্নর এই রক্তাক্ত অধ্যায় একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এ আন্দোলনের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়ে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানী সংবিধানে তথ্য সাপেক্ষে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার ফলে এ আন্দোলনের বিজয় সূচিত হয়।

Friday, May 27, 2011

বিদ্রোহী -- রংগন চক্রবর্তী

চুরুলিয়ার দুখু মিঞা
৮৯৯ সালের ২৪ মে বর্ধমানের অজয় নদীর ধারে চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিল বাচ্চাটা। বংশ ছিল কাজীদের। তাঁরা নাকি মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের আমলে বিহার থেকে চলে এসে বসতি গেড়েছিলেন এই গ্রামে। তখন কিছু নিষ্কর জমি থাকলেও দুখুর জন্ম হতে হতে সব চলে গিয়ে থেকে গিয়েছিল অশেষ দারিদ্র। নটি ছেলেমেয়ে আর দুই স্ত্রী নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন আব্বাজান কাজী ফকির আহমেদ। দ্বিতীয় স্ত্রী জাভেদা খাতুনের গর্ভে  ষষ্ঠ সন্তানের ভাল নাম নজরুল ইসলাম হলেও, ডাক নাম দুখু মিঞাটাই বেশি জুতসই হয়েছিল।

Sunday, March 13, 2011

গাদ্দাফিনামা - গৌতম চক্রবর্তী

গাদ্দাফিনামা
একটি মানুষ যখন একটি দেশ হয়ে উঠতে চান, তখন তৈরি হয় ইতিহাসের এক বিচিত্রতম
অধ্যায়। তেমনই এক আশ্চর্য একনায়কের জীবন কিস্‌সা বলছেন গৌতম চক্রবর্তী
ই আসছেন তিনি! সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত তছনছ করে, দেশে ফিরে আসছেন জাতীয় বীর আবদেল বাসেত আল মাগরাহি। এত রাতেও বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়ানো ভিড়টা গর্জন করে উঠল। বিমান ততক্ষণে থামার দৌড় শুরু করেছে।
২০ অগাস্ট,২০০৯। ত্রিপোলির বিমানঘাঁটিতে প্রাইভেট জেট থেকে নেমে এলেন আল মাগরাহি। তাঁর সঙ্গে সাইফ আল ইসলাম আল গাদ্দাফি। লিবিয়ার একচ্ছত্র নেতা মুয়াম্মর গাদ্দাফির ছেলে সাইফ ডিউক অভ ওয়েলিংটনের ব্যক্তিগত বন্ধু, লণ্ডন স্কুল অভ ইকনমিক্স থেকে ডক্টরেট করেছেন। স্কটল্যাণ্ড থেকে জাতীয় বীরকে দেশে ফিরিয়ে আনলেন তিনি। সেখানেই বন্দি ছিলেন আল মাগরাহি! সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছেন সাইফ আর আল মাগরাহি। এবং তার পরই চমক! জাতীয় বীরের জন্য অপেক্ষা করছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি স্বয়ং! আল মাগরাহিকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। কে না জানে, বিপ্লব চিরস্থায়ী! ছোট্ট দেশ লিবিয়ায় প্রতিটি সেতু থেকে রাস্তাঘাটের হোর্ডিং, ট্রাকের পিছনে সর্বত্র মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছবি। নিচে তাঁর বাণী: বিপ্লব চিরস্থায়ী।
 
আর কয়েক দিন পরেই, ১ সেপ্টেম্বর সেই চিরবিপ্লব-এর ৪০ বছর পূর্তি! ১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও সেনাবাহিনীর বিদ্রোহে সরে যেতে হয়েছিল লিবিয়ার রাজা প্রথম ইদ্রিসকে। অসুস্থ রাজা তখন তুরস্কে, সেই সুযোগে ২৭ বছরের গাদ্দাফির ক্ষমতা দখল। দুনিয়ায় হিটলার, স্তালিন, মাও জে দং... কেউই টানা চার দশক এ ভাবে ক্ষমতায় থেকে যেতে পারেননি, একই সঙ্গে মানুষের নেতা এবং ভাই হয়ে উঠতে পারেননি। প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষের দেশ লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে ওই নামেই সকলে চেনে: ব্রাদার লিডার!

Monday, September 27, 2010

ধর্মীয় মুখোশে রাজনৈতিক আন্দোলনই হিন্দুত্ববাদ - তপন রায়চৌধুরী

মরা ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসনের কাছে অনেকগুলি ব্যাপারে ঋণী। তার মধ্যে অন্যতম, রাষ্ট্রব্যবস্থার তিনটি প্রধান খুঁটির পরস্পর ব্যবধান। ইংরেজের অলিখিত সংবিধানের প্রধান ভিত্তি শাসনযন্ত্রের তিনটি প্রধান অঙ্গের পরস্পর স্বাতন্ত্র্য। নির্বাচিত বিধানসভা, নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী তথা মন্ত্রিমণ্ডলী আর বিচারব্যবস্থা...প্রত্যেকে স্বাধীন, পরস্পরের কাজে বা অধিকারে হস্তক্ষেপ করে না।
কথাটা সর্বাংশে সত্যি নয়। আইনব্যবস্থা তথা আদালত সংবিধানের ব্যাখ্যা করতে অধিকারপ্রাপ্ত। সেই ব্যাখ্যার মারফত তারা পার্লামেন্টের পরিবর্তিত আইনকে বেআইনি ঘোষণা করতে পারে। কর্মচারী বা মন্ত্রীদের কার্যবিশেষও আইনবিরুদ্ধ হলে নিষেধ করতে পারে। এই সাংবিধানিক আদর্শ ভারতবর্ষ মেনে নিয়েছে।
ভারতীয় রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের ভিতরে আইনের আপেক্ষিক প্রাধান্য লক্ষণীয়। সংবিধান ব্যাখ্যা করার চরম অধিকার উচ্চতম আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাতে। এই অধিকার সংবিধান এবং নাগরিকদের আস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষা থেকে আমরা জানতে পারি যে, শতকরা ৭২ জন ভারতীয় আইনব্যবস্থায় আস্থাবান। সে ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীরা শতকরা ৫৬ জনের বিশ্বাসভাজন আর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শতকরা ৪২ জনের। দুর্নীতি আমাদের আদালতগুলিকে স্পর্শ করেছে, তা সত্ত্বেও! তা ছাড়া পর্বতপ্রমাণ মামলা ঝুলে আছে: নিম্ন আদালতে ২ কোটি ৪৮ লক্ষ আর সুপ্রিম কোর্টে সাড়ে ৩৬ লক্ষ।


বজ্রমুষ্টি! অযোধ্যা, ১৯৯২।

সাম্প্রতিক কালে, মানে আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে হিন্দুত্ববাদের ক্ষমতা বাড়ার ফলে রাষ্ট্রজীবনের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক আমাদের ইতিহাসে একটি প্রধান বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান বইটি এই প্রসঙ্গে আমাদের উচ্চতম আদালত, সুপ্রিম কোর্টের অবদান বিষয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ। বইটি ‘ল ইন ইণ্ডিয়া’ সিরিজের অন্তর্গত, কিন্তু এটি মূলত আইনবিষয়ক বই মনে করলে ভুল হবে। আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের রাজনীতিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক এবং অবশ্যই আইনের ইতিহাসের ক্ষেত্রে এর বক্তব্যগুলির গভীর প্রাসঙ্গিকতা আছে।

Thursday, July 8, 2010

ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারে এত অবহেলা কেন - আহমদ রফিক

বিশেষ করে বিনোদনের এসব মাধ্যম তরুণদের খুবই প্রিয়। স্বভাবতই টিভি’র অনুষ্ঠানে অশুদ্ধ শব্দ ব্যবহার বা ভুল বানান লেখার গুরম্নত্ব অস্বীকার করা চলে না। কিন্ত্ত টিভি পরিচালকগণ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না, যেমন ঘামান না ‘টক-শো’ বা ‘বিতর্ক অনুষ্ঠানের’ বক্তা। তারা তাদের মত করেই বলেন, যেমন বলেন সংসদ অধিবেশনে সাংসদগণ। তাদের উচ্চারণ শুনলে মাথা ধরে যায়

আমরা বাঙালি। বাংলা আমার মাতৃভাষা। রাষ্ট্রভাষা আমাদের বাংলা।’ বিষয় তিনটে নিয়ে আমাদের শিক্ষিত শ্রেণীর তরম্নণদের মধ্যে গর্ব ও অহংকারের প্রকাশ যথেষ্ট। অবশ্য সঙ্গত কারণে। পাকিস্তানি আমলে অনেক লড়াই করে রাষ্ট্রভাষার অধিকার অর্জন, রীতিমত যুদ্ধ করে অনেক মৃত্যু, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন ভাষিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা-এ সবই এখন ইতিহাস। এবং ভাষার প্রতি, জাতীয়তাবোধের প্রতি মমত্বের প্রকাশ।

Thursday, May 27, 2010

কবি ও দার্শনিক - আ. ফ. ম উবায়দুর রহমান

কবির কাজ আবেগ-অনুভূতি নিয়ে আর দার্শনিকের কাজ চিন্তা ও যুক্তি নিয়ে। উভয়েই কিন্তু তাদের স্বস্ব কাজের জন্য বেছে নেন একটি সাধারণ মাধ্যম যা হচ্ছে ভাষা। এই ভাষা ব্যবহার করেন বলেই যিনি কবিতার চর্চা করেন তিনি শিল্পী হয়েও কবি, চিত্রকর নন এবং যিনি দর্শন চর্চা করেন তিনি দার্শনিক, স্থপতি নন। স্থপতি তাঁর কর্মের মাঝে তাঁর দর্শনকে লুকিয়ে রাখেন।, কিন্তুু দার্শনিক তা প্রচার করেন লিখে বা বক্তৃতার মাধ্যমে। কিন্তুু ভাষাটা শুধুই একটি মাধ্যম, কবিতা বা দর্শনের উপকরণ নয়। চিত্রকর বা স্থপতির মত কবি এবং দার্শনিকেরাও বিচিত্র সব উপকরণ নিয়ে কাজ করতে পারেন এবং করেন। সাধারণত: মানুষের আবেগ অনুভূতিকে সবচেয়ে বেশী নাড়া দেয় যে জিনিষটা তা হচ্ছে প্রেম, আর তাই এটিকেই বেশীর ভাগ কবি তাঁদের কবিতার উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করেন। একই ভাবে জীবন ও জগতের মৌল চরিত্র।

মানুষের চিন্তাকে বেশী উদ্দীপ্ত করে বলে মেটাফিজিক্স বা অধিবিদ্যাই দর্শনের মুখ্য আলোচ্যবিষয় বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু কবি বা দার্শনিক কেউ তাদের কাজের পরিধি এ দুটো বিষয়েই সীমাবদ্ধ রাখেননি বা রাখতে পারেননি। কবিতা বা দর্শনের উপজীব্য হিসাবে তাই বিচিত্র সব জিনিষের সমাহার দেখা যায়।অবস্থাটা এখন এমনি যে দার্শনিক এবং কবি উভয়ই তাদের দর্শন এবং কবিতার মাধ্যম যে ভাষা তাকেও তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের কর্মের উপজীব্য হিসাবে নিয়েছেন। আজকাল যাকে আমরা বিশ্লেষনী দর্শন বলি তা মূলত: ভাষা বিষয়ক দর্শন। ভাষার প্রশস্তিতে, বিশেষ করে আমাদের বাংলা ভাষার প্রশস্তিতে লেখা কবিতার সংখ্যা ও নেহায়েত কম নয়।

Friday, May 21, 2010

কালের অগ্নিবীণা -- আহমদ কবির

‘অগ্নিবীণা বাজাও তুমি কেমন করে?’ রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে এ-জিজ্ঞাসাটি কার উদ্দেশে করেছেন জানি না। হয়তো এমনি, কবির স্বাভাবিক অভিব্যক্তি হিসেবে; কিংবা হয়তো তা নয়, মনে হয়তো কোনো শিল্পী ছিলেন। তবে যে শিল্পী নজরুল নন; আর কাব্য নামের জন্য নজরুল রবীন্দ্রনাথের কাছে ঋণী হতে পারেন। নামটি চমৎকার, তাৎপর্যমণ্ডিত ও (প্রতীকময়) নজরুলের স্বভাব, বৈশিষ্ট্য ও কর্মের সঙ্গে দারুণভাবে মানানসই। নজরুল নিজেই তো অগ্নিবীণা। অগ্নিদীপ্ত বাণী ও সুর তো তিনিই। তারই হলকায় পুড়ে যায় ঔপনিবেশিক শাসন-ত্রাসনের আসন। বেজায় বিচলিত ব্রিটিশ সরকার অত্যাচার-নিপীড়নের পথ ধরল, নিষিদ্ধ করল বিশের বাঁশী, ভাঙার গান, প্রলয়-শিখা, যুগবাণী, রুদ্রমঙ্গল—সবগুলোই তো কালের অগ্নিবীণা; সমকালের শোণিতে অগ্নিপ্রবাহ-তীক্ষ� জ্বালাময়, মহাবিস্ফোরক ও অগ্নিউদ্গারী।