Monday, April 12, 2010

বাঙালির উৎসব - গোলাম মুরশিদ

এসে গেল আরেকটি নতুন বছর ১৪১৭। এ উপলক্ষে বাঙালির উৎসব নিয়ে লিখেছেন গোলাম মুরশিদ 


বাঙালি, তার মানে, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে তাবত্ বাঙালি, বারো মাসে তেরো পার্বণ থাকলেও তাঁদের উৎসব বেশি নেই। যা আছে, তার বেশির ভাগ উৎসবই ধর্মীয়, কিছু পারিবারিক। কিন্তু সকল বাঙালি মিলে পালন করতে পারে—এমন উৎসব সত্যি বিরল। অঘ্রাণের শেষে, পৌষের শুরুতে নতুন ধান উঠলে চাষিরা খুশি হতেন, হয়তো একদিন নতুন চালের ভাত একটু আলাদা গুরুত্ব দিয়ে খেতেন। কিন্তু উৎসব হিসেবে এর সঙ্গেও হিন্দু ধর্মের একটা যোগাযোগ ছিল। সুবল মিত্রের অভিধান প্রকাশিত হয় ১৯০০ সালের আগে। তাতে বলা হয়েছে যে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব পালন না করে নতুন ধানের চাল খাওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু তার থেকেও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন চিন্তাহরণ চক্রবর্তী, ভারতকোষে। তাঁর এই বর্ণনা এখন থেকে বছর পঞ্চাশ আগেকার। তখনই তিনি লিখেছেন, ‘পূর্বে ঘরে ঘরে এই অনুষ্ঠান এবং আনুষঙ্গিক উৎসবের প্রচলন ছিল।’ এ অনুষ্ঠানের বিবরণও দিয়েছেন তিনি। ‘অনুষ্ঠানের মুখ্য অঙ্গ ছিল নূতন চালে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ করা।...দেবতা, অগ্নি, কাক, ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়স্বজনকে দিয়া গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ আনুষ্ঠানিকভাবে নূতন গুড়সহ নূতন অন্ন গ্রহণ করিতেন। পৌষ সংক্রান্তির দিনও স্বতন্ত্রভাবে গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করিবার প্রথা ছিল।’ তার অর্থ এ অনুষ্ঠানও আধা-ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩০-৩৪) তাঁর অভিধানে ধর্মীয় অনুষঙ্গ থাকলেও তার প্রতি এত গুরুত্ব দেননি।

মেঘনাদ বধ ও অন্যান্য মহাকাব্য বিচারের ভূমিকা

মো হা ম্ম দ র ফি ক উ জ্জা মা ন

শাস্ত্রকার বিশ্বনাথ কবিরাজ, সংস্কৃত অলঙ্কার শাস্ত্র অনুযায়ী মহাকাব্যের যে আদর্শ নিরূপণ করেন সে অনুযায়ী মহাকাব্যের লক্ষণগুলো হলো, মহাকাব্যের অন্তত আটটি সর্গ থাকতেই হবে। এক একটি সর্গ একই ছন্দে রচিত হবে এবং সর্গের শেষে ছন্দান্তর ঘটবে! সর্গশেষে পরবর্তী সর্গ সম্পর্কে বর্ণনা থাকবে। প্রতিটি সর্গে বিষয়ানুগ শিরোনাম থাকা আবশ্যক। 'আশীর্ণমস্ক্রিয়া বস্তুনির্দেশনা বহপি তন্মুখম্।' অর্থাৎ মহাকাব্য শুরু হবে আশীর্বাদসহ নমস্কার ও বস্তুনির্দেশনা সহযোগে। 'ইতিহাসকথোদ্ভূতমিতরদ্ধা সদাশ্রয়ম্।' মহাকাব্যের বিষয় ইতিহাসাশ্রিত অথবা সত্য ঘটনানির্ভর হবে। 'চতুর্বর্গকলোপেতং চতুরোদাওনায়কম্।' চতুর্বর্গ ফল, অর্থাৎ ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষ ফললাভের উপযোগী এবং নায়ক চতুর উদাত্তগুণসম্পন্ন সদ্বংশজাত। এভাবে মহাকাব্যের ঘটনাক্রমে থাকবে নগর, পর্বত, সমুদ্র, চন্দ্রসূর্যের উদয়, যুদ্ধ, বীরত্ব, মৃত্যু, লোকরঞ্জনসহ বিবাদ, কলহ, প্রতারণা, বিবাহ _ বিচ্ছেদ, মিলন। অলঙ্কার শাস্ত্রের সমস্ত রসাভাষ ও রসাভাস থাকবে মহাকাব্যে। তবে শৃঙ্গার, বীর অথবা শান্তরসের প্রাধান্য থাকবে।