এসে গেল আরেকটি নতুন বছর ১৪১৭। এ উপলক্ষে বাঙালির উৎসব নিয়ে লিখেছেন গোলাম মুরশিদ
বাঙালি, তার মানে, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে তাবত্ বাঙালি, বারো মাসে তেরো পার্বণ থাকলেও তাঁদের উৎসব বেশি নেই। যা আছে, তার বেশির ভাগ উৎসবই ধর্মীয়, কিছু পারিবারিক। কিন্তু সকল বাঙালি মিলে পালন করতে পারে—এমন উৎসব সত্যি বিরল। অঘ্রাণের শেষে, পৌষের শুরুতে নতুন ধান উঠলে চাষিরা খুশি হতেন, হয়তো একদিন নতুন চালের ভাত একটু আলাদা গুরুত্ব দিয়ে খেতেন। কিন্তু উৎসব হিসেবে এর সঙ্গেও হিন্দু ধর্মের একটা যোগাযোগ ছিল। সুবল মিত্রের অভিধান প্রকাশিত হয় ১৯০০ সালের আগে। তাতে বলা হয়েছে যে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব পালন না করে নতুন ধানের চাল খাওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু তার থেকেও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন চিন্তাহরণ চক্রবর্তী, ভারতকোষে। তাঁর এই বর্ণনা এখন থেকে বছর পঞ্চাশ আগেকার। তখনই তিনি লিখেছেন, ‘পূর্বে ঘরে ঘরে এই অনুষ্ঠান এবং আনুষঙ্গিক উৎসবের প্রচলন ছিল।’ এ অনুষ্ঠানের বিবরণও দিয়েছেন তিনি। ‘অনুষ্ঠানের মুখ্য অঙ্গ ছিল নূতন চালে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ করা।...দেবতা, অগ্নি, কাক, ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়স্বজনকে দিয়া গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ আনুষ্ঠানিকভাবে নূতন গুড়সহ নূতন অন্ন গ্রহণ করিতেন। পৌষ সংক্রান্তির দিনও স্বতন্ত্রভাবে গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করিবার প্রথা ছিল।’ তার অর্থ এ অনুষ্ঠানও আধা-ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩০-৩৪) তাঁর অভিধানে ধর্মীয় অনুষঙ্গ থাকলেও তার প্রতি এত গুরুত্ব দেননি।